শিশুর বুদ্ধি নিয়ে আজকের আলোচনা। প্রত্যেক মা-বাবাই চান যে তাঁদের সন্তান বুদ্ধিমান হোক। যেন পিছিয়ে না পড়ে। বুদ্ধিকে আমরা সকলেই অস্ত্র বলে মনে করি। ক্ষুরধার হলে খুবই ভালো। ছোটোবেলায় খেলাধুলোর মাঠে, স্কুলকলেজের পরীক্ষার অঙ্গনে এবং জীবনযুদ্ধের প্রাঙ্গণে এই অস্ত্রটিই সাফল্য এনে দেবে। মা-বাবারাও তাই ভাবেন। ভাবেন ঠিকই কিন্তু অস্ত্র হলেই তো তাকে ধার দেবার ব্যাপার থাকে। অস্ত্রের রকমসকমও দেখে বুঝে নেবার আছে।
Table of Contents
শিশুর বুদ্ধি
বুদ্ধির ভিত কোথায়? বংশগতিতে না-কি পরিবেশের প্রভাবে? তাত্ত্বিক প্রশ্ন। আমাদের প্রশ্ন ব্যবহারিক : প্রত্যেক শিশু কিছু যোগ্যতা নিয়ে জন্মায়। প্রাপ্তি। সেই পাওয়া অংশটিকে কিভাবে বাড়িয়ে টাড়িয়ে, অনুশীলন-পরিশীলন করে, যোগ্য করে তোলা যায়। প্রাপ্ত গুণাবলি আমাদের হাতের বাইরে। কিন্তু যা আছে তাকে কর্ষণ করে কতোদূর কি করা যায় তা আমরা দেখতে পারি। যা আছে তা থেকে বেশি কেন নেই তা ভেবে হাপিত্যেশ না করে যা যা করলে শিশু যোগ্যতর হতে পারে সেটাই আমাদের প্রশ্ন। আমাদের প্রচেষ্টা। আলোচ্য।
‘শিশুর তত্ত্বাবধান’ বইতে অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয় বলা হয়েছে। এ বইয়ের পাঠক তা সব দেখেছেন ধরে নিতে পারি। বুদ্ধি বলতে কি বুঝি? বুদ্ধি যা করে তাই বুদ্ধি। একটা ক্রিয়াশীলতার নাম। মানসিক প্রকরণ। বুদ্ধির যাথার্থ্য বুদ্ধির ব্যবহারে। তবুও একে আর একটু ভালো করে বোঝার জন্যে বুদ্ধির প্রতিশব্দগুলি দেখে নিলে হয় : ধীশক্তি, মেধা, বোধি, কাণ্ডজ্ঞান, বিচারশক্তি, চতুরতা। বুদ্ধিগুণ বা বুদ্ধিশক্তি বলতে কি কি বোঝায় তা দেখা যাক : কৌতূহল, শ্রবণ, আহরণ, স্মৃতিতে ধারণ বা স্মরণ, সন্দেহ ক্ষমতা, তর্ক ও তর্কের নিরসন, অর্থবোধ, মর্মাবধারণ। কারো বুদ্ধি আছে বললে বোঝায় : চালাক, চতুর, সপ্রতিভ, স্মার্ট, প্রত্যুৎপন্নমতি, প্রখর, বিবেচক, বিচক্ষণ, স্থিরমতি।
এগুলি সবই বুদ্ধির ভালো গুণ, কাঙ্ক্ষিত স্বরূপ। বুদ্ধি শুধু ভালো দিকেই প্রকাশ পায় তা তো নয়। অন্যদিকেও, বিপথেও প্রকাশ পেতে পারে। তখন তাকে বলি : ধূর্ততা, চতুরালি, ফন্দিবাজি, ধান্দাবাজি, মতলববাজি, কুটিলতা, মন্দবুদ্ধি। দুর্মতি, প্যাঁচোয়া, সেয়ানা, ধড়িবাজ, শয়তান ইত্যাদি। আমরা মা-বাবারা সন্তানদের মধ্যে এইসব চাই না। তাই এটাও আমাদের দেখার কথা। বুদ্ধির চাষ করতে গিয়ে যেন সোনা ফলে, তাই চাই। যেন আগাছায় সন্তানের মন বিকৃত না হয়, তা দেখতে চাই।
এই সোনা ফলানোর জন্যে আমরা সকলেই স্কুল-কলেজের পরীক্ষার কথা ভাবি। জীবনের চত্বর অনেক পরের ব্যাপার, ভর্তির পরীক্ষা আর বছর বছরের শ্রেণী পরীক্ষা অনেক বেশি সমূহ বলে মনে করি। বর্তমানের সামাজিক ব্যবস্থায় আর শিক্ষার অব্যবস্থায় এ ছাড়া উপায়ই বা কি! বিচক্ষণ মা বাবা তাই নিজ নিজ সন্তানদের মধ্যে প্রায়োগিক বিচক্ষণতার কর্ষণ করাতে চান। চাইবেনই তো। কারণ adaptability (প্রতিযোজন)-কেই তো কেউ কেউ বুদ্ধির ভিত বলেছেন। এই প্রতিযোজন দুইটি মূল প্রক্রিয়ায় কাজ করে assimilation (সমন্বয় করা) এবং accommodation (মানিয়ে চলা)। যে বুদ্ধি পড়াশুনোয় কাজে লাগবে তার কথা পরে বলা যাবে।
Jean Piaget জ্ঞান বিকাশের বা বুদ্ধির উন্নতির জন্যে চারটি পর্বের উল্লেখ করেছেন :
(ক) Sensory-motor period ( সংবেদন-প্রতিক্রিয়ার কাল)। 0-2 বছর পর্যন্ত।
(খ) Prcoperational Period (প্রাক্-কর্মতৎপর কাল)। 2-7 বছর।
(গ) Period of concrete operation (বাস্তব কর্মতৎপর কাল) 7-11 বছর।
(ঘ) Period of formal operation (সামান্য কর্মতৎপর কাল) 11 -সাবালক।
দু-চারটি নির্দেশের উল্লেখ সহায়ক হবে মনে হয় : (করণীয়) :
১। শিশুকে উদ্দীপনা দিন:
যত বেশি সম্ভব উদ্দীপনার যোগান দিন। সকল ইন্দ্ৰয়কেই ‘খাদ্য’ দেবেন। দৃশ্য, শব্দ, স্পর্শ, গন্ধ এবং স্বাদ গ্রহণ ইন্দ্রিয়কে বিচিত্র বিভিন্ন উদ্দীপক দিন।
২। শিশুর জন্য দোলনা:
দোলনা শিশুর পক্ষে স্বাস্থ্যের জন্যে এবং বুদ্ধির বিকাশের পক্ষে উত্তম।
৩। একই জিনিস একাধিক ইন্দ্রিয়কে সংবেদিত বা উদ্দীপিত করুক:
একই জিনিস একাধিক ইন্দ্রিয়কে সংবেদিত বা উদ্দীপিত করুক। ঝুনঝুনি দৃষ্টিকে, কানকে এবং হাতে দিলে স্পর্শকে সংবেদিত করবে এবং মুখে দিলে স্বাদকে। ৪। জিনিসপত্র জায়গা পালটালে, বিভিন্ন দিক থেকে শব্দ এলে স্থানের ধারণা গড়ে উঠবে। ডান-বাঁ, উপর-নিচ, সামনে-পিছনে। যখন হামা দেবে তখনও। manipulate করবে, ও motor (ক্রিয়াশীলতা) reactions (প্রতিক্রিয়া) পুষ্ট হবে। মূল কথা D.Q. (Developmental Quotient) বাড়বে। এই D.Q.-ই পরে 1.Q. ( Intelligence Quotient) বা বুদ্ধাংকের ভিত হয়ে প্রকাশ পাবে।
৫। প্রক্রিয়া লক্ষ্য করুন:
শরীরের প্রতিক্রিয়া প্রতিবর্ত হতে পারে (Reflex action) আবার সাপেক্ষ হতে পারে (conditioned reflex) হতে পারে। যত বেশি সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া তৈরি করা যাবে তত বেশি বেশি নিউরোন সম্পর্ক গড়ে উঠবে। সাইনাস্ ক্রিয়াশীল হবে। শিশুরা আনন্দ পাবে। একটা খেলা খেলা মন নিয়ে উদ্দীপকের অনুসরণ করবে। সংবেদন বৈচিত্র্যে উল্লসিত বোধ করবে। [এই অনুচ্ছেদটির জন্যে কারো পক্ষে একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন হতে পারে : আমাদের শরীরে লক্ষ লক্ষ নিউরোন আছে। দুটি বা তার বেশি নিউরোন যে স্থানে মেলে তাকে বলে সাইনাপস্।
সেনসরি নিউরোনগুলি সংবেদন পরিবহন করে (অন্তমুখী) ভিতরের দিক বয়ে নিয়ে যায়। মোটর নিউরোনগুলি ক্রিয়াশীল শক্তি বহন করে (বহির্মুখী) কর্মশীল দেহ প্রান্তে নিয়ে যায়। কানেকটিভ নিউরোনগুলি সংযোগ সাধন করে। সাইনাপসগুলি সংযোগের বলয় বা ক্ষেত্র। সন্নিকর্ষ ঘটায়। সংবেদন বা শক্তি তাপীয়, রাসায়নিক, প্রোটিনাস। Impulse বললে ভাল হয়। প্রান্ত সন্নিকর্ষের (synapse-এর) ক্ষেত্র দিয়ে লাফ দিয়ে পার হয়—by induction, conduction নয়।]
৬। শিশুর বয়স অনুযায়ী বাধা:
শিশুর বয়স এবং যোগ্যতা বুঝে ‘বাধা’ তৈরি করে দিন। সামনে দেশলাই বাক্স বা মার্বেল বা পুতুল দিন। নিতে চাইলে ছোট-বড়ো কোনো বাধা রাখুন। সেই বাধা পার হয়ে লক্ষ্যে পৌঁছবে। যেন সহজেই পারে এমন ভেবে দেবেন। হিতে বিপরীত না হয় দেখবেন! প্রয়োজন বোধ করলে একটু সাহায্যও করবেন। যদি সন্তানের আগ্রহ না থাকে অথবা জেদ প্রকাশ করে তাহলে সেই খেলা থেকে সরে আসুন। না হলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। জেদ। জেদ থেকে ধৃষ্ট আচরণ ইত্যাদি।
৭। শিশুকে পরিষ্কার উচ্চারণ শেখানো:
পরিষ্কার উচ্চারণে ভাষা শেখান। আদুরি আদুরি ভাষা নয়। ঝরঝরে ভাষায় কথা বলুন। উচ্চারিত শব্দ শিশুকে বুদ্ধিমান হতে, বিচক্ষণ, স্মার্ট হতে শেখায়। এক বছর যখন বয়স তখন সে ভিতরে ভিতরে তৈরি। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে লজিক্যাল ভিত—নিউরোলজিক্যাল ভিত শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। বলছেন— একটি শিশু সারাদিনে কতো সংখ্যক শব্দ শুনছে সেটাই একটা প্রধান ব্যাপার। বুদ্ধির বিকাশে, স্কুলের সাফল্যে এবং সামাজিক যোগ্যতায়।
এখানে ওঁরা একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য’ উল্লেখ করেছেন। এই শব্দগুলি যে কোনো উৎস থেকে শিশুর কাছে এলে হবে না। T.V. রেডিও Record থেকে এলেও নয়। আসবে কোনো একজন মনোযোগী উদ্দেশ্যমুখী আপনজনের মুখ থেকে— attentive and engaged human being. এখানে দুটি বিষয় স্মরণে রাখতে হবে : এক, শিশুর জন্যে অঢেল ভালবাসাই যথেষ্ট নয়। ভালো কথা বলা এবং ঝরঝরে কথা বলা মা-মাসি-caretaker চাই। দুই, ইচ্ছে করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে ( যা attentive and engaged নয়) শিশুর বুদ্ধিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন, নৈর্ব্যক্তিক রেকর্ড বা ভিডিও।
৮। শাস্তি ও পুরস্কার:
শাস্তি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখুন:
(১) শাস্তি বিলম্বিত হবে না। তৎক্ষণাৎ দেবেন।
(২) শিশু বুঝতে পারে এমন করে, ঝরঝর করে, কারণটি আগেই বলে দেবেন।
(৩) যেখানে এবং যার কাছে অপরাধ করেছে সেখানে এবং তিনিই শাস্তিটি দেবেন। শাস্তি কেন দিচ্ছেন এবং কোন মতে দিচ্ছেন তা নিজের কাছে পরিষ্কার রাখলে সন্তানের কাছে ব্যাখ্যা দিতে অনেক ঝরঝরে হতে পারবেন। (শাস্তির তিনটি মতবাদ আছে : প্রতিরোধ মতবাদ, পাওনা মিটিয়ে দেওয়া বা মজুরি দেওয়া মতবাদ, সংশোধন করা বা শিক্ষা দেওয়া মতবাদ। সন্তান আপনার; তাই প্রতিরোধাত্মক মতবাদ শৈশবের মতবাদই নয়। (ওটা পুলিশ আর মারকুটে প্রশাসকের জন্যে! Criminals-দের জন্যে)।
একই কথা পুরস্কার বিষয়েও প্রযোজ্য। বিলম্বিত হবে না, তৎক্ষণাৎ দেবেন ইত্যাদি। এখানে বুড়ো আঙুল চোষা বিষয়ে কিছু বলা যাক। চুষতে দিন। বাধা দেবার চাইতে, জোর করে আঙুল বার করে দেবার চাইতে চুষতে দেওয়া ভাল।
চুষতে দিলে মানসিক ভারসাম্য সহজ হবে; বাধা দিলে বিপরীত ফল হবে। শাস্তি দেবেন না প্রশংসা করবেন না—ঘটছে ঘটুক মতো ভেবে ছেড়ে রাখবেন। শিশুর অজান্তে re-direct করতে পারলে করবেন—অন্য কিছুর দিকে মন ও হাতকে পারিচালিত করে দেবেন।
৯। শিশুদের খেলতে দিন:
শিশুদের খেলতে দিন। ভেবে ভেবে খেলার জিনিসপত্র দিন। পুতুলখেলা থেকে শুরু করে যতোরকমের খেলা দিতে পারেন ততোই ওদের কল্পনা শক্তি, ধারণা গঠন ক্ষমতা, নিয়মকানুন সম্পর্কে জ্ঞান বাড়বে। সমস্যা টের পাবে। সমাধানের পথ খুঁজবে। এগুলোর মাধ্যমে বুদ্ধির কর্ষণ চলবে। বহু রকমের পাজল আছে। বয়স বুঝে বুঝে সে সব দিতে পারেন।
১০। মনোযোগ দিন:
মনোযোগ দিন। যান্ত্রিক নয়। দিতে-হয়-তাই-দিচ্ছি মতো নয়। ওরা টের পায়। আপনার আগ্রহ আর মনোযোগ চাইলে তো পাবেই। সেই পাওয়াটা বড়ো পাওয়া নয়। না চাইলেও যদি পায় তাহলে সেই পাওয়াটা ওদের মনে ছাপ রেখে যায়। আপনার নিজের কাজ বন্ধ না করেও এটা করতে পারেন। মন দিলেই পারেন। বন্ধু-বান্ধবী এলে সন্তানকে ভুলে যাবেন না। সন্তানকে নিয়ে, সন্তানের গুণাবলি ব্যাখ্যান করে আধিক্যেতাও করবেন না।
শৈশবেই যে যে কারণ শিশুকে ভবিষ্যতে গেলমালে ফেলে দেয়—
১. মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। যে কারণেই হোক।
২. মায়ের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের অভাব।
৩. পরিবারের সদস্যদের মধ্যে, বিশেষ করে মা-বাবার মধ্যে, সম্পর্কের অবনতি।
৪. অতি রক্ষণশীলতা, আগলে আগলে রাখা, অতি তত্ত্বাবধান। (স্কুল ভয়, লোক ভয় ইত্যাদি (পৃ. ১৬, ৪৮ দেখুন। )
৫. সামঞ্জস্যহীন, অসংহত নীতি ব্যবহার ও পদ্ধতি প্রয়োগ। ব্যবহারের অসঙ্গতি। তখন একরকম, এখন একরকম। অথবা, মা একরকম, বাবা অন্যরকম। ইত্যাদি।
৬. দুর্ব্যবহার। নিজেদের কষ্ট যন্ত্রণার প্রভাব শিশুর উপর ছুঁড়ে দেওয়া।
আরও কিছু অবস্থা যা শিশুকে অসুখী করে তোলে—
১. অপুষ্ট স্বাস্থ্য, দুর্বল শরীর। ২. দাঁত ওঠা বা পড়া। ব্যথা-বেদনা। মা-বাবার অমনোযোগ।
৩. নিজে নিজে করার চেষ্টায় বড়দের বাধাদান। স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
৪. বেশি সময় জেগে থাকা, বেশি মনোযোগ চাওয়া। না পেলে ভাবে ভালোবাসে না।
৫. (শিশুকে মানুষ করতে নানান ঝামেলা হুজ্জত মিলে মা-বাবার মনে বিরক্তি তৈরি করে দিতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে দায়দায়িত্ব বহন করতে করতে ক্লান্ত মা-বাবা।) মা-বাবার পরিবর্তিত মনোভাব টের পায় শিশু। ভাবে ভালবাসে না। বেঁকে বসে।
৬. হঠাৎ শাস্তির প্রয়োগ। আগে ছিল না, হঠাৎ শুরু হল। ভাবে ভালবাসে না। ৭. নতুন ভাই বোন এলে। প্রথম সন্তানের ‘দায়-দায়িত্ব’ ঘাড়ে চাপে। ‘কথা’ শুনতে হয়। ‘বড়’ বলে দায়-দায়িত্বের বোঝা চাপে। কি করবেন? নিজ নিজ অবস্থার নিরিখটি বুঝে নিন। তার পরে স্থির করুন কি কি করবেন, কি কি করবেন না। ভবিষ্যতে non-adjusted child, গোলমেলে সন্তান তো আর আপনি চান না। আবার শিশু সন্তান অসুখী হোক তাও চান না। ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না—এটাই উদ্ধার করতে পারি।
শিশুর Pre-Operational (প্রাককর্মতৎপর কাল) ২–৭ বছর
প্রথমেই শিশুদের ঘুমের বিষয়ে কিছু তথ্য সামনে রাখা যাক—
১–৬ মাস, ঘুমবে ১৫ ঘণ্টা মতো
৬–১২ মাস, ঘুমবে ১৪ ঘণ্টা মতো
১২–১৮ মাস, ঘুমবে ১৩ ১/৪ ঘণ্টা মতো
১৮–২৪ মাস, ঘুমবে ১৩ ঘণ্টা মতো
২-৩ বছর, ঘুমবে ১২ ৩/৪ ঘণ্টা মতো
৩-৪ বছর, ঘুমবে ১২ ঘণ্টা মতো
৪-৫ বছর, ঘুমবে ১২ ঘণ্টা মতো
৫-৬ বছর, ঘুমবে ১১ ৩/৪ ঘণ্টা মতো
৬-৭/৮ বছর, ঘুমবে ১১ ঘণ্টা মতো
বিভিন্ন ঋতুতে যে ভিন্নতা আছে তা সব একাকার করে গড় করা। সেকেন্ডগুলোকে সঠিক রাখিনি। অন্যত্র জেনেছি যে এই ঘুমের পরিমাণটা বয়স্কদের বেলা ৬ ঘণ্টা, অন্তত। তবে সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পুরে গেলে মিটে যায়।
এই ঘুমের হিসেবটা সামনে রাখার কারণ আছে। নার্সারি-কেজি-প্রাথমিক মাধ্যমিক করে যে দিনগুলো সন্তানদের সামনে এসে পড়বে তার চাপ এখন দারুণ। প্রায়ই নিদারুণ। তাই হিবেসটা জানা থাকলে মায়ের স্বস্তি, শিশুদের শাস্তি!
আর এক গুচ্ছ তথ্য এখানে তুলে দিতে চাই। কুড়ি মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের IQ মাপা অর্থহীন। ভবিষ্যতের কোনো নির্দেশ দেয় না। তখন পর্যন্ত DQ মাপা যায়। আবার DQ এর সঙ্গে IQ এর তেমন জোরালো যোগ নেই। ভবিষ্যতের নিরিখে। কারণ এই যে মাপার বিষয়টি ভিন্ন এলাকায় পড়ে। তার চাইতে বড় কথা এই যে DQ পূর্ব শর্ত। উচ্চমানের DQ না থাকলে উচ্চমানের IQ সম্ভব নয়। কিন্তু তেমন DQ থাকলেই তেমন IQ সম্ভব হবে এমন অনিবার্যতা থাকে না। অন্য খাতে প্রবাহিত হতে পারে।
লেখাপড়ায় যে ধরণের IQ লাগে, যেমন ভাষা, ধারণা, কল্পনা, স্মৃতিসংরক্ষণ ইত্যাদি তা দুই বছরের শিশুর IQ নির্ণয় থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় না। অর্থাৎ বলা যায় না ২ বছরে যে IQ আছে তা পরেও থাকবে বা প্রকাশ পাবে। তাই দেখা যায় অনেক ‘উজ্জ্বল’ শিশু উপরের ক্লাসে হাবাগোবা বা মাটো হয়ে যায়। অনেক মাটো শিশু উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অভিভাবকদের (মা-বাবার বিশেষ করে) শিক্ষা দীক্ষা, পেশা স্তর, মনোভাব, সামাজিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া এবং শিশুর সঙ্গে সম্পর্ক অনেক বেশি যথার্থ 1Q (শিশুর) এর হদিস দিতে পারে।
ভাবার বিষয় : ছেলে ও মেয়েদের (৬ বছর—১৮ বছর) অনুসরণ করে দেখা গেছে
(ক) ৩০-৪০ IQ পয়েন্ট বাড়া-কমা ঘটতে পারে।
(খ) ছেলেদের বেলায় বেড়ে যাবার কিন্তু মেয়েদের বেলায় কমে যাবার ঝোঁক থাকে। আবার, যে সব মেয়েদের বালক-সুলভ আচরণের ঝোঁক থাকে তাদের বেলায় IQ সমানই থাকে। (মা-বাবা ভেবে দেখবেন।)
(গ) স্বল্প আয় পরিবারের ছেলেমেয়েদের বেলায় IQ সমানই থাকে। (এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা রইল বাল্য বুদ্ধি অংশে।
আরও দেখুন :