শিশুর শব্দসম্ভার : শিশুর শব্দসম্ভার বয়সের সাথে সাথে বাড়াটা জরুরী। তাদের বুদ্ধিবৃত্তি শব্দের উপরে দখল ও ব্যবহার দিয়ে পরিমাপ করা যায়।
আর একটি তথ্য মনে রাখার মতো বয়স অনুযায়ী সন্তানদের শব্দ সস্তার কতো?
শিশুর শব্দসম্ভার :
শিশুর বয়স ::: শব্দের দখল (মানে + ব্যবহারের সক্ষমতা) ::: বাড়লো মোট : বুদ্ধির হার কাছাকাছি : বুদ্ধির হার শতকরা
১ ———– ::: ০০০ —————————————- ::: ০০০ —— ::: ০০০ ————— ::: ভাগ
১.৫ ——– ::: ১০০ —————————————- ::: ১০০ —— ::: ১০০ ————— ::: “”
২ ———– ::: ৩০০ —————————————- ::: ২০০ —— ::: ২০০ ————— ::: “”
২.৫ ——– ::: ৫০০ —————————————- ::: ২০০ —— ::: ৬৭ ————— ::: “”
৩ ———– ::: ৯০০ —————————————- ::: ৪০০ —— ::: ৮৩ ————— ::: “”
৩.৫ ———::: ১২০০ —————————————- ::: ৩০০ —— ::: ৩৩ ————— ::: “”
৪.০ ———::: ১৫০০ —————————————- ::: ৩০০ —— ::: ২৫ ————— ::: “”
৪.৫ ———::: ১৯০০ —————————————- ::: ৪০০ —— ::: ২১ ————— ::: “”
৫.০ ———::: ২১০০ —————————————- ::: ২০০ —— ::: ১০ ————— ::: “”
৫.৫ ———::: ২৩০০ —————————————- ::: ২০০ —— ::: ১০ ————— ::: “”
৬.০ ———::: ২৪০০ —————————————- ::: ১০০ —— ::: ৫ ————— ::: “”
৬.৫ ———::: ২৬০০ —————————————- ::: ২০০ —— ::: ৪ ————— ::: “”
৭.০ ———::: ২৮০০ —————————————- ::: ২০০ —— ::: ৪ ————— ::: “”
শব্দসম্ভারের সংখ্যাকে শ এর হিসেবে, যোগফলকে মোট হিসেবে আর শতকরা কে আনুমানিক রেখে প্রকাশ করা হয়েছে। মা-বাবারা নিজেরা অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য এবং দরকারি করণীয় বুঝে নিতে পারবেন। শতকরা বৃদ্ধির হারটি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
(ক) প্রথম বয়সের কোরা-মন শিশুমন অনেক অনেক শব্দ শুষে নিচ্ছে।
(খ) ৩ বছর পার হয়ে গেলে নতুন সংগ্রহে শতকরা ঘাটতি চলছে।
(গ) শতকরা ঘাটতি হলেও ঘাবড়াবার কারণ নেই।
শব্দের ভাঁড়ে যখন মা ভবানী তখন ১০০ শব্দ যোগ হলেই, বা তার পরে ২০০ শব্দ যোগ হলেই পরিসংখ্যান ‘বুবকা’-র (Pole jump record holder Bubca) উল্লম্ফন দেখাচ্ছে। আবার পূর্ণ-কুম্ভ কলসীতে পরিসংখ্যান তেমন শতকরার স্বাস্থ্য প্রকাশে অক্ষম। (ঘ) উন্নতির বিষয়টি নিয়ে যে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে সেই সেই বিজ্ঞানেই প্লাটুয়েক্স বা সানুদেশ বা সমতল অবস্থার কথা বলবে। বৃদ্ধি বা উন্নতির রেখা কখনই সরল হয় না। বিশ্রাম নেয়; অর্থাৎ কিছুকাল সম-চলন অবশ্যম্ভাবী। একে উন্নতির থমকে থাকা কাল বলা যায়।
বাইরে থমকে থাকে কিন্তু Platuax কাল ভিতরে ভিতরে assimilation ঘটায়। অধিত বা সংগৃহীত সামগ্রী (এখানে শব্দ) সকলকে গুছিয়ে গাছিয়ে ব্যবহারযোগ্য ও স্মরণযোগ্য বিন্যাসে তখন কাল কাটায়। Platuax কে তাই আরও বৃদ্ধির বা উন্নতির ধাপ বলা হয়।
পরবর্তী ধাপের জন্য এটা প্রস্তুতি-সংস্থিতির ধাপ বলা যায়। করণীয় :
১. ঝরঝরে করে বলুন, নতুন শব্দকে বার বার নানা প্রসঙ্গে ব্যবহার করুন।
২. উচ্চারণ যদি সঠিক না হয় তাহলে উচ্চারণের সময় আপনার মুখের ভিতর বা বাইরেটা শিশুকে বুঝিয়ে দিন। উচ্চারণের প্রকৌশলের খুঁটিনাটি দেখে দেখে অনুকরণ করবে।
৩. বইয়ের লিখিত শব্দ বর্ণবিন্যস্তভাবে উচ্চারণ করবেন, সমঝোতা করবেন না। স্থানীয় উচ্চারণের সঙ্গে সমঝোতার কথা বলছি। প্রয়োজন কে পোঅজন বা পয়োজন করে শেখাবেন না। (বানান বিষয়ে সংসদের অভিধান অনুসরণ করা বোধ হয় শ্রেষ্ঠ পথ)।
৪. শব্দ সৃষ্টি খেলুন। শব্দের বানান এবং শব্দ বানানো দুটোই করুন।
৫. শব্দ তৈরি করা, খুঁজে বার করা, শৃঙ্খলাবদ্ধ করা, ক্রস ওয়ার্ড, পাজল ইত্যাদিতে সন্তানের ঝোঁক তৈরি করে দিন। নিজেরা যোগ দিন। নেতিবাচক মূল্যায়ন করবেন না। অর্থাৎ যদি সন্তান না পারে তাহলে ‘পারে নি’ বা ‘পারলো না’ না বলে ‘চেষ্টা সঠিক হয়েছে’ ‘প্রায় পেরে গেছিলে’ এ রকম ইতিবাচক মন্তব্য করুন।
৬. ছোট নোটবুক অথবা পুরোনো ডায়রিকে ‘অভিধান’ বানাতে সাহায্য করুন অ আ কথA B C D করে সূচীপত্র করে দিন। ছেলেমেয়েকে সঠিক পাতায় নতুন আহরিত শব্দ লিখে রাখতে শেখান। Systematic মন তৈরি হবে। নতুন শব্দ সংগ্রহকে বাহবা দিন। অভিধান মুখী মন তৈরি হলে ভবিষ্যতের অনেক অসুবিধার হাত থেকে বেঁচে যাবে।
৭. যে কোনো বিষয় নিয়ে চার-ছয় লাইন লিখতে শেখান। ছোট ছোট বাক্য হবে। আশপাশের পরিচিত বিষয় হবে। বাংলায় এবং ইংরেজিতেও। শুধু নির্দেশ দিয়ে ক্ষান্ত হবেন না। করে করে শেখাবেন। দেখিয়ে দেবেন। প্রত্যেক দিনের বিষয়টি বলে বা লিখে দেবেন। এবং আগ্রহ দেখাবেন। কি লিখেছে তা দেখে দেবেন। প্রশংসা করবেন।
৮. হাতের লেখা পরিষ্কার এবং ঝরঝরে হওয়া চাই। (নিজেদের লেখা খারাপ হলে সেই গোলমাল আগে চেষ্টা করে ঠিক করে নেবেন। সন্তানরা সাধারণত মা-বাবার হাতের লেখা নকল করে থাকে। অনেক অন্য কিছুর মতোই।)
বিজ্ঞানীরা বলছেন শব্দ সম্ভার, ভাষা ব্যবহার যোগ্যতা এবং চিন্তা শক্তি ওতপ্রোত সম্পর্কিত। ছাত্রজীবনে এবং সারা জীবনে এর প্রয়োজন, ব্যবহার অপরিসীম। কেউ কেউ তো ভাষা এবং চিন্তাক্ষমতাকে সমার্থক বলেছেন। অনেক মতামতের কচকচি আছে। থাক। আমাদের উদ্দেশ্য শিশুকে তৈরি করা। আমরা জানি চিন্তাশক্তির উন্নতি হয়। না যদি যোগ্যভাবে ভাষার উন্নতি না ঘটে থাকে। কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। বলে যে কামনা তা সম্পূর্ণ আলাদা অর্থে।
দশজনের মধ্যে একজন হতে হলে সন্তানকে কথা বলায় দড় হতে হবে। কারো কথা আমরা শুনবো কি শুনবো না, মনোযোগ দেবো কি দেবো না তা নির্ভর করছে সেই ব্যক্তির কথা বলার উপর। অনেকাংশেই। কি বলছে, কিভাবে বলছে, শব্দচয়ন ও ক্ষেপণ ইত্যাদি। কণ্ঠস্বর? অবশ্যই। কণ্ঠস্বরও পরিশীলন যোগ্য। ‘কোকিল’ না হোক ‘কাক’ যেন না হয়। শৈশব থেকেই এসব বিষয়ে মা-বাবা নজর দেবেন। তৈরি করবেন। (‘শিশুর তত্ত্বাবধান’-এ বলা আছে)।
আরও দেখুন :