Table of Contents
শীতে শিশুর পরিচর্যা
সবচেয়ে জরুরী সচেতনতা:
শীতে শিশুর পরিচর্যা বিষয়ে আপনাকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া শিশুর সাথে বসবাসরত সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রথমে শিশুদের ঠাণ্ডা বাতাস এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু শীতে সংক্রামিত রোগের প্রবাহ বাড়ে, তাই শিশুদের যতটা সম্ভব জনসমাগমপূর্ণ জায়গা বা ভিড় থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। শিশুদের ব্যবহারের জন্য তাদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা রাখতে হবে। ঠান্ডা, কাশি বা সংক্রামিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময়, শিশুদের দূরে রাখতে হবে। শিশুদের স্কুলে অথবা বাইরে যাবার সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস করাতে হবে।
এর পরও যদি শিশুরা ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়, তবে তাদের আদা লেবু চা, গরম পানিতে গড়গড়া, মধু, তুলসি পাতার রস প্রভৃতি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
গরম পানির ব্যবহার:
পুরো শিতকাল শিশুদের হালকা কুসুম গরম পানি পান ও ব্যবহার করাতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দাঁত ব্রাশ করা, হাত-মুখ ধোয়া, প্রতিবার খাওয়ার সময় হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া শিশুদের নানা রকম কাজে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে, সোনামনিদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত রাখা যায়।
শীতেও শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় শরীরের কাছাকাছি তাপমাত্রার হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। তবে নবজাতক কিংবা এ্যজমা বা ঠাণ্ডার সমস্যা আছে, এমন শিশুদের পুরো গোসল দেবার বদলে, গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে, পুরো শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। যেভাবেই গোসল করান, গোসল শেষে যত দ্রুত সম্ভব, শরীর থেকে পুরো পানি মুছে ফেলতে হবে। অর্থাৎ খেয়াল রাখতে হবে, গোসল শেষে শরীরের কোন অংশ যেন ভেজা না থাকে।
অনেকেই শিশুকে জবজবে করে সরিষার তেল মাখিয়ে গোসল করান। মনে রাখতে হবে – এতে গোসল শেষেও শিশুর চুল ভেজা থাকে এবং ঠাণ্ডা লাগে। তাই জবজবে সরিষার তেল মাখিয়ে গোসল করানোর সিদ্ধান্ত নেবার বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে।
গরম পোশাক:
শিশুদের অবশ্যই গরম পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের সরাসরি উলের পোশাক পরানো ঠিক নয়। এসব ক্ষেত্রে উলের ক্ষুদ্র লোমে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে সুতি কাপড় পরাতে হবে, তার ওপরে উলের পোশাক পরাতে হবে। তবে এসব পোশাক যেন নরম কাপড়ের হয়।খসখসে বা শক্ত কাপড় পরালে শিশুদের নরম ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মনে রাখা দরকার – হালকা শীতে শিশুদের গরম পোশাকটি হালকা হতে হবে, খুব বেশি গরম কাপড়ের হওয়া উচিত নয়। কারণ প্রয়োজন অতিরিক্ত গরম কাপড় পরালে, শিশুরা ঘামতে পারে। সেই ঘাম গায়ে বসে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে, শিশুদের হালকা ফুল হাতা গেঞ্জি পরিয়ে দিন। সকালে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও বিকালের দিকটাতে হালকা শীতের পোশাক পরান।
শীতে শিশুদের খাবার:
শীতকালে শিশুদের খাদ্য গ্রহণ প্রবণতা কমে যায়। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, কম খাদ্য গ্রহণের কারণে তাদের শরীর খারাপ হয়ে যায়। এজন্য শীতকালে ঘনঘন শিশুদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। শিশুরা খেতে না চাইলে নানা রকম সৃষ্টিশীল পদ্ধতিতে তাদের খাবর প্রতি আগ্রহী করা যেতে পারে।
শিশুদের ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষকরে ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ এবং ফলের রস খাওয়ানো প্রয়োজন। এঠাড়া গাজর, বিট, টমেটো শিশুদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।
এসব খাবার আলাদা আলাদা করে খাওয়ানো কষ্টকর হতে পারে। তাই বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি দিয়ে, খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে – শিশুরা যেন এই সময় কোনো ধরনের ঠাণ্ডা খাবার না খায়।
শীতকালে ত্বকের যত্ন:
শিশুদের ত্বক বড়দের থেকে অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাই তাদের ত্বক খুব সহজেই রুক্ষ হয়ে যেতে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই শিশুর মুখে এবং সারা শরীরে বেবি লোশন, বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি পরিমিত ভাবে ব্যবহার করুন।
আরও পড়ুন: