বুদ্ধির পরিমাপ | শিশুর মন ও শিক্ষা | সূচিপত্র , প্রত্যেক মা-বাবা তাঁদের সন্তানদের মধ্যে বুদ্ধির প্রকাশ দেখতে চান, প্রত্যেক শিক্ষক তাঁর ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে সেই বুদ্ধিরই ছাপ দেখতে চান এবং প্রত্যেক বড়োরা তাঁদের প্রিয় ছোটদের কাজেকর্মে চলনে বলনে বুদ্ধির ঝলক দেখতে চান। এমন কি পরবর্তী জীবনে অভিভাবক-মালিক-নিয়োগকর্তারাও তাকিয়ে থাকেন তাঁদের অধীনস্থদের মধ্যে যেন ঝরঝরে বুদ্ধির ভাণ্ডারটি পূর্ণ না হলেও সম্পন্ন অবস্থায় থাকে। আজকের প্রগতির যুগে আর প্রতিযোগিতার সর্বগ্রাসী বাতাবরণে এই বুদ্ধিকেই সকলে উচ্চস্থানে বসিয়ে রেখেছেন।
জ্ঞানের ভাণ্ডার, বিচারের ক্ষমতা, শিক্ষার ঔজ্জ্বল্য, অবহিতির প্রসার, প্রজ্ঞার সম্পন্নতা— সবই অর্জনযোগ্য যদি ব্যক্তির বুদ্ধিটা সুধার থেকে ক্ষুরধার থাকে। আবার এই থাকাটা শৈশব-বাল্য-কৈশোর-তারুণ্যেই বাস্তব হতে হবে। সকলেই জানেন যে ১৬ বছর পর্যন্ত (কখনও কখনও ১৮ পর্যন্তও) বুদ্ধির বৃদ্ধি হয়ে থাকে; তার পরে যার হয় না ষোলতে তার হয় না ছিয়াশিতে! কারণ তার পরে যা হয় তা অন্য কিছু হয়, বুদ্ধির আর বৃদ্ধি হয় না।
আমাদের ভাবনা এখানে সন্তানদের নিয়ে; বড়দের যা হবার তা তো কবেই হয়ে গেছে। বড়রা এখন ছোটদের নিয়েই ব্যতিব্যস্ত; আমরাও বুদ্ধি বলতে আমরা কী বুঝি তা সঠিক বুঝি না তবে অনেক অর্থেই বুদ্ধিকে খুঁজে পাই, ব্যবহার করি : ধীশক্তি, মেধা, প্রজ্ঞান, বোধি, জ্ঞানগম্যি, বোধভাষ্যি, আক্কেল, কাণ্ডজ্ঞান, বিচক্ষণতা, বিচারশক্তি ইত্যাদি। আবার মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতের বিভিন্নতা দেখলে আমাদের মতিচ্ছন্ন হতে হবে, গোলকধাঁধায় ঘুরে মরবো। আমরা মত-জিজ্ঞাসু নই, পথ জিজ্ঞাসু। এই গ্রন্থে।
কিন্তু সেই পথকে জানতে গেলেও কয়েকটি বিষয়কে আলাদা করে জেনে নিতে হয় । যাকে পরিমাপ করা হবে সেই বুদ্ধিটা আসলে কি? এখানেও শতেক ঝামেলা। বুদ্ধির সংজ্ঞা দেওয়া শক্ত; যা ক্রিয়াশীল, ব্যবহারেই যার অস্তিত্ব, যার গতিপ্রকৃতির মধ্যেই একটা প্রতিযোজনা-অভিব্যক্তি-উদ্বর্তন-সাফল্য-অসাফল্য জড়িত তা তো কোনো বস্তু নয় কোনো শ্রেণী নয় যে সংজ্ঞা দেওয়া যাবে! বুদ্ধির তাই বর্ণনা সম্ভব, সংজ্ঞার্থকরণ নয়। নীল আকাশের কোলে উড়ন্ত পাখির বর্ণনা সম্ভব, সংজ্ঞা দিয়ে না সেই উড্ডয়নকে না সেই সুন্দর সত্যকে ধরে দেওয়া যায়। বুদ্ধিও তাই।
শৈশব-কৈশোরের মনের উড়ানে বুদ্ধির ঝলক, প্ৰশ্ন উত্তর পরীক্ষায় বুদ্ধির কার্যকর প্রকাশ আর দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে বুদ্ধির তাৎক্ষণিক সামগ্রিক প্রয়োগ বাস্তব সত্য। বুদ্ধি মাপতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা তাই ‘ক্ষমতার’, এবিলিটির, পরিমাপ করতে চেষ্টা
Table of Contents
বুদ্ধির পরিমাপ | শিশুর মন ও শিক্ষা | সূচিপত্র
প্রশ্নতালিকা : বয়স অনুযায়ী টেস্ট-প্রশ্ন
আলফ্রেড বিনের তালিকা :
- ৩ বছর বয়স
- ৪ বছর বয়স
- ৫ বছর বয়স
- ৬ বছর বয়স
- ৭ বছর বয়স
- ৮ বছর বয়স
- ৯ বছর বয়স
- ১০ বছর বয়স
- ১১ বছর বয়স
- ১২ বছর বয়স
- ১৩ বছর বয়স
- ১৪ বছর বয়স
- ১৫ বছর বয়স
সিরিল বার্টের যুক্তি-বিচার ক্ষমতার পরীক্ষা পদ্ধতি :
- সাত বছর বয়স
- আট বছর বয়স
- নয় বছর বয়স
- দশ বছর বয়স
- এগারো বছর বয়স
- বারো বছর বয়স
- তেরো বছর বয়স
- চৌদ্দ বছর বয়স
পরীক্ষার সময়ে ছাত্রছাত্রীদের ‘জ্ঞানের’ পরিমাপ করা হয়— অধীত জ্ঞানের। দুটো কি আলাদা? হ্যাঁ এবং না। ক্ষমতা ছাড়া জ্ঞান সম্ভব নয় আবার জ্ঞান ছাড়া ক্ষমতা বাস্তব নয়। যে কোনো বিষয়ে অনেকটা-কিছুটা জানা না থাকলে, ভাণ্ডারে কিছুটা-অনেকটা জমা না থাকলে আরও কিছু জানাটা সম্ভবই হয় না; কিছুটা জ্ঞান না থাকলে আরও জ্ঞান সম্ভব নয়। আবার ক্ষমতা না থাকলে জানাটাই সম্ভব নয়। যেমন : একটি প্রশ্ন করলে অন্তত সেই প্রশ্নটি বোঝা চাই, সেই শব্দ-ভাষা-বাক্যটি বোঝা চাই। তখনই মাত্র সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব। এই উদাহরণে, ভাষাজ্ঞান না থাকলে প্রশ্নজ্ঞান হয় না, প্রশ্নবোধ না ঘটলে উত্তরের ক্ষমতা প্রকাশ পায় না। একটার সঙ্গে অন্যটা ওতপ্রোত জড়িত; অঙ্গাঙ্গী। কিন্তু এক নয়।
অতীত জ্ঞান-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, প্রদত্ত সমস্যার কোনো এক অংশের সঙ্গে অন্য কোনো অপ্রদত্ত বিষয়ের সংযোগ সাধনের ক্ষমতাকে বুদ্ধি বলা যায়। অথবা অতীতের অধীত জ্ঞানের সাহায্যে বর্তমানের সমস্যার সমাধানের সূত্র-সম্পর্ক বের করাটাই বুদ্ধির ক্ষমতা।
যেমন, বিড়াল এবং বিড়ালছানা বললে কুকুর এবং …….? কলকাতা যা পশ্চিমবঙ্গে মুম্বাই তা ……….। অন্ধের কাছে বর্ণ যা বধিরের কাছে তাই। মনে রাখতে হবে যে, এক, ধাঁধা, চুটকি, মজা, হেঁয়ালি ইত্যাদির ক্ষেত্রে যে ‘ক্ষমতা’ লাগে তা বুদ্ধি নয়, অন্য কিছু। এই সব ক্ষেত্রে সাফল্য-অসাফল্য বুদ্ধির পরিমাপ নির্দেশ করে না।
দুই যে সকল সমস্যা সমাধানে সার্বিকতা (ইউনিভার্সালিটি), বিষয়গততা (অবজেকটিভিটি), যথাৰ্থতা (ভ্যালিডিটি), প্রথাসিদ্ধকরণ (স্ট্যাণ্ডার্ডাইজেশন), প্রয়োগযোগ্যতা (অ্যাপ্লিকেবিলিটি) এবং পরিমাপযোগ্যতা (মেজারেবিলিটি) আছে সেখানেই বুদ্ধির পরিমাপ সম্ভব ৷ তিন, প্রশ্নোত্তরে, ভাষার ব্যবহারেই, একমাত্র বুদ্ধির পরিমাপ হচ্ছে তা নয়, অন্যান্য অনেক পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় তা সম্ভব : কাজের মাধ্যমে, ছবি আঁকা ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিপুণতা-কুশলতার পরিমাপে ইত্যাদি।
অতএব মানসিক বয়স নির্ণয় করতে হবে পরীক্ষার মাধ্যমে। পাঁচ, প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে মানসিক বয়স নির্ণয় করার সময়ে (ক) সন্তান একা থাকবে এবং পরিবেশে যেন তার লজ্জার বা ভয়ের কারণ না থাকে। খোলামেলা মনে হবে। (খ) সন্তানের জন্ম বয়সের এক ধাপ নিচের তালিকা দিয়ে শুরু হবে। (গ) অসফল হলে আরও এক ধাপ নিচের (ঘ) শুরু করে ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে উপরের তালিকায় যেতে হবে। পর পর চার-পাঁচটি পরীক্ষায় অসফল হলে সেই ধাপে থেমে যেতে হবে।
আরও দেখুন: